শবে বরাতের ইবাদত, তাৎপর্য ও ফজিলত

শবে বরাত:

শবে বরাত
শবে বরাত

শবে বরাত ইসলামিক ধর্মের একটি অন্যতম ইবাদত ও ক্ষমা প্রার্থনার দিন হিসাবে ধরা হয়। এই দিনটি হিজরী ক্যালেন্ডারে পবিত্রতম মাস শাবান মাসের ১৫ই তারিখে পালন করা হয়। এই উৎসবের নাম শবে বরাত’ হলো আরবি ভাষার উপর ভিত্তি করে যার মানে ‘মাফ ও ক্ষমার রাত’। এই রাতে আল্লাহ পাক তাঁর রহমত ও ক্ষমার বর্ষণ করেন এবং মানুষকে ক্ষমা চাইতে উৎসাহিত করেন। ইসলামী ধর্মে শবে বরাত অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন হিসেবে বিবেচিত হলেও এর বিষয়ে অনেক বিভিন্ন ধারণা এবং প্রথা রয়েছে। নিচে এর উৎপত্তি এবং ইবাদত সম্পর্কিত বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো।

শবে বরাতের উৎপত্তি:

শবে বরাতের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা রয়েছে। কয়েকটি ধারণা হলো –
প্রথমতঃ, একবার আল্লাহ পাক প্রবেশ করেছিলেন জান্নাতের দরজা উখাউখাও হওয়া এবং এর মাধ্যমে তাঁর বন্ধু মুসলিমদের কিছু গুনাহ মাফ করে দিতে চান। এটি হিজরী ৪০ সালের মাহে শাবান মাসে ঘটেছে।

দ্বিতীয়ত- একটি অন্যতম ধারণা হলো শবে বরাত একটি মৃত ব্যক্তির সাথে আল্লাহ পাক তাঁর মহফিলে সাক্ষা্তভাবে আলোচনা করেছেন। এটি হিজরী ৫৩ সালের মাহে শাবান মাসে ঘটেছে।

তৃতীয়ত- কুরআনে নবী মুহাম্মদ (সা.) এর মৃত্যুর পর আল্লাহ পাক তাঁর পরিবারকে উপহার দিতে চাইলেন। এটি হিজরী ৬১ সালের মাহে শাবান মাসে ঘটেছে।


এই রাতে মুসলিম সমাজের একটি বিশেষ ইবাদতের রাত। এই ইবাদতে মুসলিম সমাজ আল্লাহ পাক কে সমর্পিত হয় এবং মুসলিম সমাজ নিজের গুনাহ মাফ করে দিতে চায়। এই দিন মুসলিমরা কিছু বিশেষ ইবাদত ও দোয়া করে।

শবে বরাতে মুসলিমরা নামাজ পড়ে, কুরআন পড়ে এবং আল্লাহ পাকের কাছে দোয়া করে। এছাড়াও এই দিন মুসলিমরা কবরস্থানে যাওয়া এবং আল্লাহ পাক কে মার্চাপ ও মিলাদুন নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শন করে।

শবে বরাতে মুসলিম সমাজ দোয়া করে আল্লাহ পাক কে তাঁর গুনাহ মাফ করতে বলে। মুসলিমরা একটি বিশেষ দোয়া পড়ে যা হলো – “আল্লাহম্মা ইন্নী আফুওঁ বিকা মাঃ দাইমা মা দাম্মাতি ওমুকাফফিরউ মা তারিম ওমা তরকু”।


শবে বরাতে মুসলিম সমাজ প্রত্যেকটি গুনাহ থেকে বিরত থাকতে চায়। এই রাতে মুসলিমরা অত্যন্ত সতর্ক থাকে এবং নিজেদের গুনাহ মাফ করতে আল্লাহ পাক কে প্রার্থনা করে।

এছাড়াও মুসলিমরা শবে বরাতে কিছু নির্দিষ্ট কাজ করে যা হলো-

১. নামাজ পড়া: এই রাতে মুসলিমরা নামাজ পড়ে আল্লাহ পাক কে প্রার্থনা করে। ইসলামে নামাজ একটি মৌলিক ইবাদত। এই রাতে নামাজ পড়ার সময় মুসলিমরা অত্যন্ত সতর্ক থাকে এবং নামাজটি পড়ে প্রত্যেকটি গুনাহ থেকে বিরত থাকতে চায়।

২. কুরআন পড়া: এই দিনে মুসলিমরা কুরআন পড়ে আল্লাহ পাক কে প্রার্থনা করে। কুরআন মুসলিমরা জীবনের সকল ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনে কুরআন পড়া আরও মুসলিমদের মন শান্ত করে এবং তাঁদের গুনাহ মাফ করার জন্য আল্লাহ পাক কে প্রার্থনা করে।
৩. দোয়া করা: শব-ই-বরাতে মুসলিমরা দোয়া করে আল্লাহ পাক কে প্রার্থনা করে। দোয়া পড়ার মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহ পাক কে তাঁদের গুনাহ মাফ করার জন্য অনুরোধ করে।

৪. জিকির করা: এই রাতে মুসলিমরা জিকির করে আল্লাহ পাক কে প্রার্থনা করে। জিকির করা মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহ পাক কে প্রশংসা করে এবং তাঁদের গুনাহ মাফ করার জন্য অনুরোধ করে।

৫. সুন্নাহ আমল: এই রাতে মুসলিমরা সুন্নাহ আমল করে আল্লাহ পাক কে প্রার্থনা করে। সুন্নাহ আমল হলো প্রফেত মুহাম্মদ (সা.) এর আচরণের উপর ভিত্তি করে এমন আমল। শব-ই-বরাতে সুন্নাহ আমল করার মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহ পাক কে তাঁদের গুনাহ মাফ করার জন্য প্রার্থনা করে।

তাছাড়া অনেক মুসলিম এই দিনে ইবাদত হিসাবে রোজা পালন করে ও দান-সদ্গা করে থাকে।

এই দিনে সুন্নাহ আমলের মধ্যে হাদীস পাঠ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্ম। প্রফেত মুহাম্মদ (সা.) এর হাদীস পাঠ করে মুসলিমরা তাঁদের আদর্শ পরিবর্তন করে আল্লাহ পাক কে তাঁদের গুনাহ মাফ করার জন্য প্রার্থনা করে।

শবে বরাতে মুসলিমরা সাধারণত কয়েকটি হাদীস পাঠ করে।

কিছু উদাহরণ হলো:

তিরমিজী হাদীসে এসেছে যে, আল্লাহ পাক হযরত আইশা (রা.) কে একটি স্বপ্ন দেখান, যেখানে হযরত আইশা (রা.) তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, “কী করে আপনি এই দিনে ইবাদত করেন?” হযরত আইশা (রা.) উত্তর দিলেন, “আমি বহুভাগ সময় প্রবন্ধ করতে থাকি এবং আল্লাহ পাক কে মাফ করার জন্য দোয়া করি।”

সুনানে আবু দাউদ হাদীসে এসেছে যে, হযরত আবু হুরাইরাহ (রা.) বলেছেন, প্রফেত মুহাম্মদ (সা.) এর শিক্ষা অনুসারে আল্লাহ পাক এর মহানতা এবং করুণাময়তার মাথায় এক দিন শবে বরাতের দিনে আল্লাহ পাক তাঁর অনুগ্রহ ও মাফ করুন।”

আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা.) বলেছেন, প্রফেত মুহাম্মদ (সা.) এর শিক্ষা অনুসারে এই দিনে নাফল নামাজ পড়া উত্তম। তাই আল্লাহ পাক আমাদের নামাজ পড়া ও অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে আমাদের গুনাহ মাফ করেন।

এটি একটি বিশেষ দিন, যা মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি দিন, যা আল্লাহ পাক বিশেষভাবে আমাদের কাছে রহমত ও করুণা ফাঁস করেন। এটি একটি দিন, যা আমরা আল্লাহ পাক কে সমর্পিত করতে পারি আর তাঁর দোয়া ও অনুগ্রহের মাধ্যমে আমাদের গুনাহ মাফ করতে পারি।

শবে বরাতের দিনে মুসলিমরা নাফল নামাজ পড়া উত্তম বলে মনে করেন। এছাড়াও এই রাতে কুরআন পড়া, সূরা ইখলাস ও সূরা ফাতিহা পড়া ও দুআ করা উত্তম। মুসলিমরা আল্লাহ পাক কে দুআ করে তাঁর কৃপা ও মাফ চাইতে পারেন।

শবে বরাতের দিনে দান করা উত্তম। মুসলিমরা দরিদ্র ও সুযোগবহুল লোকদের উপর কৃপা করে দান করেন। এছাড়াও অন্যান্য করিতম ইবাদত ও ইসলামিক ক্রিয়াকলাপ করা হয় এই দিনে।

শবে বরাত ইসলামিক সংস্কার এবং ইবাদতের একটি বিশেষ দিন। এটি আল্লাহ পাক এর রহমত এবং করুণাময়তার জন্য একটি সুযোগ। শব-ই-বরাতের দিনে আমরা আল্লাহ পাক কে উপাসনা করতে পারি, আমাদের গুনাহ মাফ করতে পারি এবং তাঁর কাছে দুআ করতে পারি।

শবে বরাতে হালুয়া রুটি খাওয়া কি শরীয়ত সম্মত?

পবিত্র শবে বরাতকে কেন্দ্র করে বাড়িতে অনেক সময় নানা রকমের হালুয়া, ফিরনি, রুটি-সহ দারুণ খাবার তৈরির প্রচলন দেখা যায়। এসব খাবার অনেক সময় আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। তবে ইসলামে এই রীতির কনো দলিল বা বৈধতা পাওয়া যাইনি।

আরও পড়ুন-

কাজী নজরুল ইসলাম এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস- ১৯৭১

মিশরীয় পিরামিড: পিরামিডের রহস্য ও ইতিহাস

শেয়ার করুন -

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top